বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৪১ অপরাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক: রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের বিধান আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইনে থাকছে না বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। বুধবার (২০ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের বিষয়ে তিনি এ কথা জানান। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এই ব্রিফিংয়ের আয়োজন করে।
গতকাল প্রথমবারের মতো সচিবালয়ে অফিস করেন প্রধান উপদেষ্টা। সেখানে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন তিনি। এ জন্য সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সচিবালয়ে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল।
আসিফ নজরুল বলেন, রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের বিধান আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইনে থাকছে না। এ সময় উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।
আইন উপদেষ্টা বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সংশোধন অধ্যাদেশের খসড়ায় বিভিন্ন হিউম্যান রাইটস অর্গানাইজেশন, সাংবাদিক, দেশি-বিদেশি আইনজীবীর মতামত নেওয়া হয়েছে। এছাড়া জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস অর্গানাইজেশনের কাছে পাঠানো হয়েছিল। সব মতামতের ভিত্তিতে আমরা একটা খসড়া করেছি। এটা উপদেষ্টা পরিষদে উত্থাপন করা হয়েছিল। উপদেষ্টা পরিষদে গৃহীত হয়েছে। তবে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়েছে সংশোধনী দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। আমরা যে আইনের সংশোধনীটা করেছিলাম সেখানে রাজনৈতিক দলকে শাস্তি দেওয়ার বিধান ছিল। খসড়ায় বলা ছিল, আদালত যদি মনে করেন তারা রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কনসার্নড অথোরিটির (সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ) কাছে সুপারিশ করতে পারেন।
তিনি বলেন, আইনের সংশোধনীতে তিন বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার বিচারের বিধান রাখা হয়েছে। ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করা হয়েছে।
ত্রুটি-বিচ্যুতি পরিবর্তন করে স্বচ্ছ উপায়ে বিচারের জন্য আইন সংশোধন করা হয়েছে। সংশোধনীতে রোম স্ট্যাটিউট (রোম সংবিধি) অবলম্বন করে জেনোসাইড, মানবাধিকারবিরোধী অপরাধের সংজ্ঞা পরিবর্তন করা হয়েছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে তিন বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থারও বিচারের বিধান রাখা হয়েছে সংশোধনীতে।
আসিফ নজরুল বলেন, উপদেষ্টা পরিষদের আলোচনায় বলা হয়েছে, আমরা এই বিচারকে অন্য কোনো বিষয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে চাই না। রাজনৈতিক দল কিংবা সংগঠনকে নিষিদ্ধ করার প্রশ্ন এলে এই আইনকে অযথা প্রশ্নবিদ্ধ করার সুযোগ সৃষ্টি হবে। আমরা সেই সুযোগ দিতে চাই না। আমরা ডিসেন্টওয়েতে / ফেয়ারওয়েতে বিচারটা করতে চাই। এ জন্য প্রভিশনটা বাতিল করা হয়েছে। আরেকটা বিষয় হচ্ছে, আমরা অনুভব করেছি, যদি কোনো রাজনৈতিক দল কিংবা সংগঠনকে নিষিদ্ধ করার দাবি সমাজে ওঠে, তাহলে আমাদের অন্যান্য আইন আছে।’
আইন উপদেষ্টা বলেন, এই আইনে অভিযুক্ত পক্ষকে সমান সুযোগ দেওয়া হয়েছে। সাক্ষীর নিরাপত্তার যথেষ্ট সুযোগ থাকবে। সাক্ষ্য-প্রমাণের অডিও-ভিডিও প্রয়োজনে প্রচার করতে পারবে…সবার সম্মান বজায় রেখে। আন্তর্জাতিক বা দেশীয় মানবাধিকার সংগঠন ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত থেকে বিচার পর্যবেক্ষণ করতে পারবে।
‘আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৪’-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। অধ্যাদেশে সংরক্ষণের প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) বিচার প্রক্রিয়ার অডিও ও ভিডিও করার বিধান রাখা হয়েছে।
সচিবালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।
বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদসচিব শেখ আব্দুর রশীদ বলেন, কিছু কিছু অপরাধের স্থল ঠিক করা ছিল বাংলাদেশের অভ্যন্তরে। এখন বাংলাদেশের বাইরেও যদি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আমলযোগ্য কোনো অপরাধ সংঘটিত হয়, সেগুলোও নতুন সংশোধনীর মাধ্যমে বিবেচনায় নেওয়া যাবে।
তিনি বলেন, ‘একটি বিষয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে—পাবলিক হিয়ারিং হবে কি না। অনেক সময় দেখা যায়, কেউ কেউ ছবি নিতে চান, কোর্ট প্রসিডিংয়ের অডিও-ভিডিও রেকর্ড করতে চান। আমরা মডার্ন হয়েছি, প্রগ্রেসিভ হয়েছি, আলাপ-আলোচনা হয়েছে যে কোর্টের ডিসকাশনে ছেড়ে দিতে পারি। পরে রেকর্ড হিসেবে সংরক্ষণের জন্য তারা অডিও-ভিডিও রেকর্ডিং করতে পারে। আইনে সেই প্রভিশনটা রাখা হয়েছে। ঐতিহাসিক প্রয়োজনে ট্রাইব্যুনাল এগুলো রেকর্ড করতে পারবে। তবে এগুলো বাইরে সম্প্রচার হবে না। গণমাধ্যমের এটা করার সুযোগ থাকবে না।’
গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ ও আন্তর্জাতিক আইনের অধীন অন্যান্য অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচারের লক্ষ্যে ১৯৭৩ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন প্রণয়ন করা হয়। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান চলাকালে যেসব হত্যাকাণ্ড হয়েছে, তার বিচারপ্রক্রিয়া এরই মধ্যে শুরু হয়েছে এই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক অপরাধগুলোর সংজ্ঞা যুগোপযোগীকরণ, অপরাধের দায় নির্ধারণ, অডিও ও ভিডিওর মাধ্যমে বিচারকাজ ধারণ ও সম্প্রচার, বিদেশি কাউন্সেলের বিধান, বিচারকালে অভিযুক্তের অধিকার, অন্তর্বর্তী আপিল, সাক্ষ্যের গ্রহণযোগ্যতা ও প্রাসঙ্গিকতা সংক্রান্ত বিধান, তদন্ত কর্মকর্তার তল্লাশি ও জব্দ করার বিধান, পর্যবেক্ষক, সাক্ষীর সুরক্ষা, ভিকটিমের অংশগ্রহণ ও সুরক্ষার বিধান সংযোজন করে সংশোধনীর খসড়াটি করা হয়েছে।
অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, আরব আমিরাতে আটক থাকা আরো কিছু বাংলাদেশিকে ফেরত আনার জন্য সরকার চেষ্টা চালাচ্ছে।
জেনেভায় বিব্রতকর পরিস্থিতির বিষয়ে আইন উপদেষ্টা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন কি না—জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি ব্যক্তি আসিফ নজরুলের সঙ্গে কোনো সমস্যা নয়। এটি অন্তর্বর্তী সরকারের একজন উপদেষ্টার সঙ্গে সংঘটিত ঘটনা। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করছে বলে জানান তিনি।